করোনা আবহের মধ্যেই বাংলার দিকে এগিয়ে আসছে সাইক্লোন “যশ”
বেঙ্গল মিরর, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত : করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যখন রীতিমতো জর্জরিত দেশ। তখনই অন্যদিকে গতবছরের আমফানের স্মৃতি ফিরিয়ে কর্ণাটক, গোয়া, কেরালায় যথেষ্ট ক্ষতি করেছে তাওকটে। আরব সাগরের উপর তৈরি হওয়া এই ঘূর্ণাবর্ত (Cyclone) অবশ্য প্রভাব ফেলেনি।আর তাতেই সাময়িক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল বঙ্গবাসী। কিন্তু আমদানির রীতিমতো রাতের ঘুম কারলো বাংলার। তাওকটে তেমন ক্ষতি না পড়লেও এবার বাংলার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, এই ঝড়ের ক্ষমতা হতে চলেছে আমফানের থেকেও অনেকটাই বেশি।
আগামীকাল থেকে বাড়ি থেকে অতি ভারী বৃষ্টি এবং জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে আন্দামানের দ্বীপ ও সন্নিহিত অঞ্চলে।এই দুই ঝড় কে সামাল দিতে দিল্লির মৌসুম ভবনে খোলা হল নতুন কন্ট্রোল রুম। অত্যাধুনিক কন্ট্রোলরুম থেকে প্রায় 50 জন আবহাওয়াবিদ এই ঝড়ের গতিবিধি লক্ষ্য করবে এবং দেশকে সতর্ক করবে।নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি নজরে রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভারতীয় দুই যুদ্ধজাহাজ কে।
পূর্ব – মধ্য বঙ্গোপসাগর নিম্নচাপ তৈরি হওয়ায় সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে এই ঝড়, এমনটাই জানানো হয়েছে। কয়েকদিন ধরেই ভীষণ গরমে বাংলার আবহাওয়া হয়ে উঠেছে রীতিমতো অস্বস্তিকর। এই গরমে অস্বস্তি সহ্য করতে হবে আগামী আরো দুদিন, এমনটাই মনে করছে আবহাওয়া দপ্তর। শুধু তাই নয়, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছাতে পারে প্রায় ৩৯ ডিগ্রী অবধি। তবে শুক্রবার থেকে কিছুটা মুক্তি। কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের জুড়ে রয়েছে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের ঝড় আছড়ে পড়তে পারে রবিবার অর্থাৎ ২৩ মে।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নিচু এলাকা থেকে সমস্ত মানুষকে নিরাপদ উচ্চতায় সরে যেতে বলা হয়েছে। কারণ সব থেকে বড় জলোচ্ছ্বাস আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও তৎসম নিহিত দ্বীপ গুলির উপর আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে।আবহাওয়াবিদদের মতে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ কমপক্ষে 350 থেকে 370 কিলোমিটার/ঘণ্টা হতে চলেছে। তবে বায়ুর উত্তাপ ব্যতিরেকে এই গতিবেগ বাড়তেও পারে আবার কমতেও পারে।দিল্লির মৌসুম ভবনে এই প্রথম বিশেষ জায়েন্ট কন্ট্রোল রুম খোলা হল মধ্য ও পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উদ্বুদ্ধ ঘূর্ণিঝড় কে কেন্দ্র করে।
গতবছর আমফানে রীতিমতো বিধ্বস্ত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। কোনভাবে মৃত্যু ঠেকানো গেলেও পরিস্থিতি উঠেছিল চরমে। দিনের পর দিন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা। চারিদিকে গাছ পড়ে থাকায় থমকে গিয়েছিল শহর কলকাতাও। হাওয়া অফিসের অনুমান, আমফানের থেকেও অনেক বেশি ক্ষমতা রয়েছে যশের। তাই তার ধ্বংসকারী প্রভাব হতে চলেছে মারাত্মক |
ইতিমধ্যেই মঙ্গলবার থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা জুড়ে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়িতে, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার সহ মালদহের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর তরফে ইতিমধ্যেই সতর্ক করা হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলাগুলিকে।কোভিডের এই পরিস্থিতি এবার গত বছরের তুলনায় অনেকখানি মারাত্মক। রোজই আক্রান্ত হচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ। মৃত্যুর পরিমাণও শতাধিক। এমতাবস্থায়, গত বছরের মতো ইলেকট্রিসিটির অভাব তৈরি হলে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে হবে আমজনতাকে।
করোনা আবহে এই বছর অনেক রোগীকেই দিতে হচ্ছে অক্সিজেনের সাহায্য। সে ক্ষেত্রে গত বছরের মতো পরিষেবা বিধ্বস্ত হয়ে পড়লে পরিস্থিতিকে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে তা বলাই বাহুল্য। আগামী দিনে বাংলায় “যশ” এখন কি প্রভাব ফেলে সেটাই দেখার।