টাকা নিয়ে পারিবারিক অশান্তি, শ্বশুর বাড়ি থেকে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, থানায় আত্মসমর্পণ স্বামীর
বেঙ্গল মিরর,রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ২৯ সেপ্টেম্বরঃ বিয়ের মাত্র ১৩ মাসের মধ্যে শ্বশুর বাড়ি থেকে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হলো। মঙ্গলবার রাত বারোটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে আসানসোলের সালানপুর থানার ডোমডহা গ্রামে। বুধবার সকালে এই ঘটনার কথা জানাজানি হওয়ার পরে গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। মৃত গৃহবধূর নাম পাপিয়া গরাই (১৮)। দেহ উদ্ধারের পরে রাতেই মৃত বধূর স্বামী জীবন গরাই সালানপুর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে। আপাততঃ পুলিশ তাকে আটক করেছে। বুধবার দুপুরে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ম্যাজিস্ট্রেটের রিপোর্টের ভিত্তিতে গৃহবধূর মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সালানপুর থানার ডোমডহা গ্রামের বাসিন্দা পাপিয়া ধীবরের সঙ্গে একই গ্রামের যুবক জীবন গরাইয়ের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো। পরে পাপিয়া জীবনকে বিয়ে করার জন্য বাবা সঞ্জয় ধীবর সহ বাড়ির লোকেদের জানায়। কিন্তু কোন কাজ না করা জীবনের সঙ্গে তারা মেয়ের বিয়ে দিতে চাননি। শেষ পর্যন্ত বাবা ও বাড়ির লোকেদের অমতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ২০২০ সালের জুলাই মাসে পাপিয়া জীবনকে বিয়ে করে। বিয়ের পরে পাপিয়ার সঙ্গে তার বাবা ও বাপের বাড়ির লোকেরা কোন সম্পর্ক রাখেনি। এরপর পাপিয়া অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পাপিয়ার শ্বশুর বাড়ি থেকে সেই কথা তার বাপের বাড়িতে জানানো হয়। তবুও তারা পাপিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
মঙ্গলবার রাত বারোটা নাগাদ শ্বশুর বাড়ির একটি ঘরে গলায় দড়ি দেওয়া ঝুলন্ত অবস্থায় পাপিয়াকে দেখতে পান স্বামী সহ শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। সঙ্গে সঙ্গে তাকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এদিন আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাপিয়ার বাবা সঞ্জয় ধীবর বলেন, আমাদের অমতে বিয়ে করায় মেয়ের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখিনি। মঙ্গলবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ পাপিয়ার এক কাকা শ্বশুর আমাকে ফোন করে বলে, মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে আসানসোলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেই সময় হাসপাতালে আসার মতো কোন গাড়ি পাইনি। ভোর পাঁচটার সময় হাসপাতালে এসে জানতে পারি, মেয়ে অসুস্থ হয়নি। সে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। আমরা এটাও জানতে পারি, জামাই রাতেই সালানপুর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে।
সঞ্জয় ধীবর সহ গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকেরা এদিন বলেন, আমাদের সঙ্গে বিয়ের পর থেকে কোন সম্পর্ক না থাকলেও, জানতে পারি যে, মাস কয়েক আগে পাপিয়া রুপশ্রীতে ২৫ হাজার টাকা পেয়েছিলো। পরিবারের একজন মারা যাওয়ায় জীবন পাপিয়ার কাছ থেকে সেই চায়। কিন্তু পাপিয়া সেই টাকা দিতে চায়নি। যা নিয়ে তাদের মধ্যে অশান্তি হয়েছিলো। বাপেরবাড়ির লোকেদের আরো দাবি, পাপিয়া আত্মহত্যা করেনি। আমরা স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকেদের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করবো। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করুক।
এদিকে এদিন সালানপুর থানার পুলিশ জানায়। গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হওয়ার পরেই, তার স্বামী এসে আত্মসমর্পণ করেছে। তাকে আটক করা হয়েছে। গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকেরা অভিযোগ করলেই আইনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদেরকে গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করতে বলা হয়েছে।
ধর্ষণের দোষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ, কিশোরীকে তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ