আসানসোলে পুকুর ভরাটের অভিযোগ, দুই থানার পুলিশের হাতে গ্রেফতার তিন জমি ব্যবসায়ী
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও দেব ভট্টাচার্যঃ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া বার্তা ও হুঁশিয়ারীর পরে আসানসোলের জমি মাফিয়া চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে। শুরু হয়েছে ধড়-পাকড়ও। এবার পুকুর ভরাট করে বেআইনি জমি প্লটিং ও বিক্রির অভিযোগে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ বুধবার রাত দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতরা হলো আসানসোলের বাসিন্দা তাপস নন্দী এবং কাজোড়ার চন্দন শর্মা। অন্যদিকে, অন্য একটি ঘটনায় একই অভিযোগ বুধবার রাতে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ মুন্না সাউ নামে আরো একজনকে গ্রেফতার করেছে। বৃহস্পতিবার ধৃত তিনজনকে আসানসোল আদালতে পেশ করে দুই থানার তরফে ১৪ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক তিনজনেরই জামিন নাকচ করে ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ। দুই থানার পুলিশ ধৃতদের বিরুদ্ধে ডব্লুবিআইএফ আইনের ( ওয়েষ্ট বেঙ্গল ইনল্যান্ড ফিসারিজ এ্যাক্ট, ১৯৮৪) ১৭/এ নং ধারায় মামলা করেছে।




জানা গেছে, গত ২২ জুলাই আসানসোল পুরনিগমের ৫ নং বোরো অফিসের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ইন্দ্রজিৎ কোনার আসানসোল পুরনিগমের ১৫ নং ওয়ার্ডের পলাশডিহা মৌজায় পলাশডিহা গ্রামে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে বলে আসানসোল উত্তর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে নির্দিষ্ট করে ২৯ জনের নাম বলা হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ২১ জনের নামে পুলিশ এফআইআর করে। সেই এফআইআর মতো তদন্ত করতে নেমে বুধবার রাতে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ চন্দন শর্মা ও তাপস নন্দীকে গ্রেফতার করে।
একইভাবে, গত ২৬ ডিসেম্বর আসানসোল পুরনিগমের ৪ নং বোরো অফিসের সহকারী ইঞ্জিনিয়ার কাজল গোস্বামী আসানসোলের এনএস রোডে একটি পুকুর ভরাট করার অভিযোগ দায়ের করেন আসানসোল দক্ষিণ থানায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা করে তদন্তে নামে পুলিশ। সেই তদন্তেই বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয় মুন্না সাউকে।
জানা গেছে, দুটি ঘটনাতেই দুটি এলাকার বাসিন্দারা আসানসোল পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায় ও পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক এস পোন্নাবলমের কাছে পুকুর ভরাট করা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সেই মতো আসানসোল পুরনিগমের তরফে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের কাছে এইসব অভিযোগের সত্যতা জানতে চাওয়া হয়। সেই মতো ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর তদন্ত করে জানায় যে, অভিযোগ সঠিক। দুজায়গাতেই পুকুর ভরাট করা হয়েছে। সেই মতো পুরনিগমের ইঞ্জিনিয়াররা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। জানা গেছে, আসানসোল পুরনিগমের ৪ নং বোরোতে তিনটি ও ৫ নং বোরোতে সাতটি পুকুর ভরাটের অভিযোগ রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে দুই বোরোর দুই চেয়ারম্যান রাজেশ তেওয়ারি ও অনিমেষ দাস বলেন, পুকুর ভরাটের অভিযোগ আসার পরে আমরা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরকে দিয়ে তদন্ত করাই। তারপর তাদের রিপোর্ট মতো থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এই ব্যাপারে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের ডিসিপি (সেন্ট্রাল) ধ্রুব দাস বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, দুটি নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আসানসোল দক্ষিণ ও আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ মোট তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। তাদেরকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ, এর আগে অন্য একটি পুকুর ভরাটের মামলায় দিনেশ গরাই এবং উইলসন নামে দুজনকে দিন কয়েক আগে গ্রেফতার করেছিলো আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ। বর্তমানে তারা জামিনে বাইরে রয়েছেন।
সূত্র থেকে জানা গেছে, ধৃত ও অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে পুকুর ভরাটের মাধ্যমে জমি দখল ও প্লটিংয়ের চক্র চালাচ্ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে এই চক্রের ওপর নজর রাখা হয়।
স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে গোপন সূত্রের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। জানা গেছে, পুকুর ভরাট করে প্লটিংয়ের মাধ্যমে জমি বিক্রির ক্ষেত্রে একটি বড় সিন্ডিকেট কাজ করছে। এই চক্র শুধু পরিবেশ ধ্বংস করছে না, পাশাপাশি বেআইনি জমি বেচাকেনার মাধ্যমে সরকারের রাজস্বেও বড় ধাক্কা দিচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই এই চক্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিলো , পুকুর ও জলাশয় ভরাট করার ফলে এলাকায় জলের সংকট বাড়ছে। একইসঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এমনকি স্থানীয় কৃষকরা জমি ও পুকুর হারিয়ে বেকারত্বের মুখে পড়েছেন। এখন দেখার, মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পরে পুলিশ ও প্রশাসন এই চক্রের বেআইনি কারবারে লাগাম টানতে পারে।