কাঠগড়ায় তৃণমূল পরিচালিত আসানসোল পুরনিগম, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব আইএনটিটিইউসি নেতা
উচ্ছেদের পরে দুবছরেও হয়নি পুনর্বাসন
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ আসানসোলের জিটি রোডে সেন্ট জোসেফ হাইস্কুলের সামনে রাস্তার পাশে ব্যবসা করা দোকানদারদের প্রায় ২ বছর আগে আসানসোল পুরনিগম উচ্ছেদ করেছিল। সেই সময় পুর কতৃপক্ষের তরফে তাদেরকে পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু, তাদের মধ্যে বেশিরভাগকেই এখনও পুনর্বাসন দেওয়া হয়নি। উচ্ছেদ করার পরে ঐ জায়গায় একটি পার্ক তৈরী করা হয়েছে। সেই পার্কে একটি নার্সারিকে বসতে দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।




এই প্রসঙ্গে, আবারও তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি নেতা রাজু আলুওয়ালিয়া তৃণমূল পরিচালিত আসানসোল পুরনিগমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন।
মঙ্গলবার আইএনটিটিইউসি নেতার নেতৃত্বে উচ্ছেদ হওয়া দোকানদারেরা ঐ পার্কে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান।
রাজু আলুওয়ালিয়া বলেন, প্রায় ২ বছর আগে সেন্ট জোসেফ হাইস্কুলের সামনে জিটি রোডের পাশে ব্যবসা করা ৪১ জন দোকানদারকে উচ্ছেদ করা হয়েছিলো। সেই সময় এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো যে তাদেরকে পুনর্বাসন দেওয়া হবে। তাদের মধ্যে কেউ চা বিক্রি, কেউ মোটরসাইকেল মেরামত করতো। কেউ বা ছোট ব্যবসা করে তাদের সংসার চালাত। কিন্তু ২ বছর কেটে গেছে। সেই ৪১ জন দোকানদারের মধ্যে একজন দোকানদার ছাড়া আর কাউকে পুনর্বাসন করা হয়নি। সেখানে একজন দোকানদারকে আসানসোল নার্সারিকে ব্যবসা করতে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪০ জন দোকানদারকে কোনও পুনর্বাসন দেওয়া হয়নি। তারা গত দুই বছর ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু তাদের কোনও পুনর্বাসন দেওয়া হচ্ছে না।
রাজু আলুওয়ালিয়া স্পষ্টভাবে বলেন যে, এই ক্ষেত্রে আসানসোল পুরনিগমে দুর্নীতি হয়েছে। মেয়র বিধান উপাধ্যায় ও ডেপুটি মেয়র ওয়াসিমুল হক সহ অন্যান্যরা এটি সম্পর্কে অবগত আছেন। কিন্তু কেউই এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। তিনি প্রশ্ন তোলেন যে, শুধুমাত্র একজন দোকানদারকে পুনর্বাসন দেওয়ার কারণ কি ?
সাংবাদিকরা রাজু আলুওয়ালিয়ার কাছে জানতে চান যে তিনি নিজে তো তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক ইউনিয়নের একজন নেতা। তা সত্ত্বেও তিনি তৃণমূল পরিচালিত আসানসোল পুরনিগমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ তুলছেন। রাজু আলুওয়ালিয়া বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলায় এমন একটি সরকার রয়েছে যারা পুনর্বাসন ছাড়াই কাউকে উচ্ছেদে কখনও বিশ্বাস করে না। তবে আসানসোল পুরনিগমের কিছু লোক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শকে উপেক্ষা করে কাজ করছেন।
পুনর্বাসন ছাড়াই উচ্ছেদ করা হচ্ছে
যে কারণে আসানসোল পুরনিগমের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন বা নষ্ট হচ্ছে। তাই তাদের এর বিরোধিতা করার পূর্ণ অধিকার আমার রয়েছে।
তবে, এই বিষয়ে যখন আসানসোল পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র ওয়াসিমুল হকের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান যে, ঐ এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া লোকদের পুনর্বাসিত করা হয়েছে। তাদেরকে রবীন্দ্র ভবনের সামনে আসানসোল পুরনিগমের নির্মিত মার্কেটে দোকান দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু তাদের অনেকেই সেখানে যেতে অস্বীকার করেন। তখন আসানসোল পুরনিগম বলেছিল যে ভবিষ্যতে যখন আবার এমন কোনও প্রকল্প আসবে, তখন তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিকল্প দোকান দেওয়া হবে।
তবে বর্তমানে আসানসোল পুরনিগমের এমন কোনও প্রকল্প নেই যে কারণে এটি সম্ভব নয়। ৪১ জন দোকানদারের মধ্যে মাত্র একজন দোকানদারকে ঐ পার্কে জায়গা দেওয়ার প্রশ্নে ওয়াসিমুল হক বলেন, সেখানে একটি নার্সারি তৈরি করা হয়েছে। একজন ব্যক্তিকে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখানে কাজ এখনও শেষ হয়নি। পার্কের কাজ শেষ হলে, এখন যে স্টলগুলি আছে তাও সরিয়ে নেওয়া হবে।
দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতার অভিযোগ প্রসঙ্গে ওয়াসিমুল হক বলেন, যে কেউ কিছু বলতেই পারেন। তবে এই বিষয়ে কোনও দুর্নীতি হয়নি। তবে, যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে রাজু আলুওয়ালিয়া দলের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা। তবুও তিনি আসানসোল পুরনিগমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন। ওয়াসিমুল হক এর কোন উত্তর দেননি। তিনি শুধু বলেন, সংগঠনের নেতৃত্বরাই এর উত্তর দিতে পারবেন।