ASANSOL

দুর্গাপুরে গৃহবধূকে খুনের অভিযোগ, স্বামী ও শাশুড়ি গ্রেফতার

বেঙ্গল মিরর, দুর্গাপুর ও আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ পণের দাবিতে গৃহবধূকে খুন করার ঘটনা ঘটলো শিল্পনগরী দুর্গাপুরে। আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের দুর্গাপুর থানার গোপালমাঠ বাগানপাড়ার বাসিন্দা গৃহবধূ ২৪ বছরের মেঘা দাসকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার পরে গলা টিপে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা বলে চালানোর অভিযোগ উঠলো তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের বিরুদ্ধে। শনিবার দুপুরে শ্বশুরবাড়িতে মৃত্যু হয় মেঘা দাসের। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। মৃতার মা বাঁকুড়ার পাত্রসায়ের থানার বালসির বাসিন্দা মহুয়া দাস বৈরাগ্য শনিবার বিকেলে দুর্গাপুর থানায় গোটা বিষয়টি জানিয়ে মেগা দাসের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ ও ননদাইের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ মৃতার স্বামী বিধান চন্দ্র দাস ও শাশুড়ি অঞ্জলি দাসকে গ্রেফতার করেছে। বাকি তিনজন ফেরার রয়েছে।


পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১২ মার্চ বাঁকুড়ার পাত্রসায়ের থানার বালসির বাসিন্দা মেগা দাস বৈরাগ্যের সঙ্গে দুর্গাপুর থানার গোপালমাঠ বাগানপাড়ার বিধান চন্দ্র দাসের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ১ লক্ষ টাকা পণ দেওয়া হয়। এছাড়া ৪ ভরি সোনার গয়না সহ অনান্য আসবাবপত্র দেওয়া হয় মেগার বাপের বাড়ি থেকে । তাদের তিন বছরের একটা সন্তান আছে। বেশ কয়েক মাস পর থেকে নানা কারণে শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরা তাকে আরো পনের জন্য অত্যাচার শুরু করে। অভিযোগ তাকে ভালো করে খাবার খেতে দেওয়া হতো না। মেগা সেই কথা মাকে বলেছিলো। যে কারণে বিয়ের দেড় বছর পরে আরও ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। তারপরের মেঘার উপর অত্যাচার বন্ধ হয় নি।

চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি মহুয়া দাস বৈরাগ্য কোনভাবে জানতে পারেন যে, মেয়েকে মারধর করে শ্বশুর বাড়িতে একটা ঘরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সেই খবর পেয়ে তিনি মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যান। কোনমতে সেখান থেকে মেয়েকে উদ্ধার করে তিনি নিজের কাছে নিয়ে আসেন। একমাস সেখানে থাকার পরে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকেরা ক্ষমা চেয়ে, তাকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। শনিবার দুপুরের পরে বিধান চন্দ্র দাস শাশুড়ি মহুয়া দাস বৈরাগ্যকে ফোন করে জানায়, মেগা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ও বাপের বাড়ির লোকেরা দুর্গাপুরে আসেন।


পরে মহুয়া দাস বৈরাগ্য পুলিশকে বলেন, মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। তাকে আরো পনের জন্য মারধর করে, গলা টিপে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই অভিযোগের পরেই মেঘাকে খুনের অভিযোগে তার স্বামী বিধান চন্দ্র দাস ও শাশুড়ি অঞ্জলি দাসকে গ্রেফতার করে পুলিশ।


পুলিশ জানায়, দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে মেঘা দাসের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মৃতার বাপের বাড়ির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামী ও শাশুড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, আসানসোল জেলা হাসপাতালে ময়নাতদন্তকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা অটোপসি সার্জেন না থাকায় গৃহবধূর মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে মৃতদেহর ময়নাতদন্ত করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *