ASANSOL-BURNPUR

পশ্চিম বর্ধমানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যু ; করোনায় মৃত হাতুড়ে ডাক্তারের সংস্পর্শে থাকা ৩০ জনকে পাঠানো হলো আইসোলেশন ও হোম কোয়ারানটাইনে

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, ১০ এপ্রিল, ২০২০, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত: করোনা ভাইরাসে ( কোভিড- ১৯) আক্রান্ত হয়ে পশ্চিম বর্ধমানে  প্রথম মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে এলো। বৃহস্পতিবার রাতে দূর্গাপুরে কোভিড ১৯ হাসপাতালে(সনকা হাসপাতাল) আসানসোল পুরনিগমের ২৪ নং ওয়ার্ডে রেলপারের নয়া মহল্লার এন আর আর রোডের বাসিন্দা বছর ৭৫ এর এক বৃদ্ধর মৃত্যু হয়।

ঐ বৃদ্ধ পেশায় হাতুড়ে চিকিৎসক বলে জানা গেছে। এই মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে আসানসোল শহর ও শিল্পাঞ্চলের পাশাপাশি গোটা জেলা জুড়ে নতুন করে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য দপ্তর ও আসানসোল পুরনিগমের পক্ষ থেকে সবাইকে আতঙ্কিত না হওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। 

এদিন বিকালে গোটা পরিস্থিতি ও পরবর্তী সময়ে কি কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা করতে আসানসোলে আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশের পুলিশ কমিশনার অফিসে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। তাতে পুলিশ কমিশনার সুকেশ জৈন, জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি, আসানসোল ও দূর্গাপুর পুরনিগমের মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি ও দিলীপ অগস্থি, আসানসোলের পুরকমিশনার তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি সহ অন্যান্য ছিলেন। পরে পুরকমিশনার বলেন, আসানসোলের রেলপারে এক বৃদ্ধর মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পজিটিভ পাওয়া গেছে। রাজ্য সরকার ও স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশ মতো তার দেহ কবর দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, এমন ৩০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

তাদেরকে আইসোলেশান ও হোম কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়েছে। তাদের উপর নজরদারি করা হচ্ছে। পাশাপাশি রেলপার এলাকার ২৪ ও ২৫ নং ওয়ার্ডে স্যানিটাইজেশন করা হচ্ছে। মৃত ব্যক্তি গত কয়েকদিনের মধ্যে যেখানে যেখানে গেছিলেন, সেইসব এলাকাও স্যানিটাইজেশন করা হচ্ছে। পুরকমিশনার বার্তা দিয়ে বলেন, অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কোন কিছু হলে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করলেই হবে। 

জানা গেছে, রেলপারের বাসিন্দা ঐ হাতুড়ে চিকিৎসকের আসানসোলের কুলটির নিয়ামতপুরের  লছিপুর এলাকায় একটি চেম্বার আছে। গত ২ মার্চ তিনি সেখানে গেছিলেন। সেখানে তিনি রোগীও দেখেন। তারপরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আগে থেকেই তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিলো। চারদিন আগে তাকে দূর্গাপুরের মিশন হাসপাতাল নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে বাড়ির লোকেরা ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসকরা করোনা ভাইরাসের উপসর্গ আছে বুঝতে পেরে তাকে দূর্গাপুরেই জেলার ঠিক করা কোভিড ১৯ হাসপাতালে পাঠান। এরমধ্যেই তার লালারস পরীক্ষার জন্য কলকাতায় পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সেই রিপোর্ট জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে আসে। তারপর রাতেই বৃদ্ধর মৃত্যু হয়। 
শুক্রবার সকালে প্রথমে ঠিক হয় আসানসোলের জিটি রোডের তালপুকুরিয়া কবরস্থানে বৃদ্ধর দেহ কবর দেওয়া হবে। কিন্তু, এলাকার বাসিন্দাদের  আপত্তিতে সেখানে দেহ কবর দেওয়া যায়নি। পরে বিকালে আসানসোলের রেলপারে ওকে রোডের কবরস্থানে সেই দেহ কবর দেওয়া হয়। 
ঐ বৃদ্ধ কিভাবে করোনা   ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন?  তা নিয়ে জেলা প্রশাসন খোঁজ শুরু করেছে। একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, মার্চ মাসে দিল্লি থেকে ৩০ জনের মতো বিদেশি আসানসোলের রেলপারের তিনটি মসজিদে ছিলেন। এই চিকিৎসক তাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং তাদের শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা করেন। এছাড়া আরো জানা গিয়েছে ওই করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির পুত্রের একটি ওষুধের দোকান রয়েছে আসানসোলের জনবহুল হটন রোড মসজিদের কাছেই।
        অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে আসানসোল জেলা হাসপাতালের আইসোলেশান ওয়ার্ডে আরো এক বৃদ্ধর মৃত্যু হয়। হটন রোডের বাসিন্দা বছর ৬৬ এর ঐ বৃদ্ধ বৃহস্পতিবার দুপুরে ২ টা ৩০ মিনিট নাগাদ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসেন। বিভিন্ন করোনা সংক্রান্ত উপসর্গ থাকায় তাকে আইসোলেশান ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সূত্রের খবর অনুযায়ী বিকেল ৫ টা নাগাদ তার মৃত্যু হয়। বৃদ্ধ করোনা ভাইরাসে  আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা তা জানার জন্য হাসপাতাল কতৃপক্ষ লালারস পরীক্ষার জন্য কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। তবে গতকাল রাতেই বৃদ্ধর দেহ পরিবারের সদস্যদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তালপুকুরিয়া কবরস্থানে তার দেহ কবর দেওয়া হয়।
 এ ব্যাপারে প্রতিবেদন লেখার সময় সাংবাদিকের তরফে ওই এলাকার বোরো চেয়ারম্যান ঘোলাম সরোবরকে ফোন করা হলে তিনি এই ব্যাপারটাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন এবং এলাকার মানুষকে আরো সচেতন হবার কথা বলেন। সঙ্গে তিনি বলেন প্রশাসন ও করপোরেশনের পক্ষ থেকে জায়গাটি সানিটাইজ করার পদ্ধতি জারী রয়েছে। তিনি বলেন ওই পরিবারের সবাইকে কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হবে।”
  এ ব্যাপারে দুর্গাপুরের হাসপাতালে ফোন করা হলে তাদের পক্ষে থেকে কোনো ফোন তোলা হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *