ASANSOLPANDESWAR-ANDAL

আসানসোলে লোহার রড বোঝাই ট্রেলার ” হাইজ্যাক “৯৬ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার, ধৃত ৫

বাঁকুড়া থেকে গয়া যাওয়ার পথে, জিএসটি অফিসারের পরিচয় দূষ্কৃতিদের

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ ( Asansol Durgapur Police News ) বাঁকুড়ার মেজিয়া থেকে গয়া যাওয়ার পথে আসানসোলের কালিপাহাড়িতে ৪১ টন লোহার রড বোঝাই একটি ট্রেলার ” হাইজ্যাক ” করেছিলো একদল সশস্ত্র দূষ্কৃতি। যারা নিজেদেরকে ‘ জিএসটি ‘ অফিসার বলে ট্রেলারের চালক ও খালাসির কাছে পরিচয় দিয়েছিলো। তবে শেষ রক্ষা আর হয়নি।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, ফোন নম্বর সহ বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে তদন্ত করে আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত চার দূষ্কৃতিকে ধরে ফেলে। গ্রেফতার করা হয় এক ব্যবসায়ীকেও। অন্ডাল থানার হরিপুরের বাসিন্দা তাপস মন্ডল নামে ঐ ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে পুলিশ ৪১ টন লোহার রডের মধ্যে ৩৭ টন উদ্ধার করেছে। বাকি চারজন হলো রানিগঞ্জ থানার বল্লভপুরের হায়দার আলি ও প্রশান্ত দাস, পান্ডবেশ্বরের হরিপুরের নিরাজ খান ও আসানসোল উত্তর থানার রেলপারের মহঃ শাহনাজ হোসেন। ধৃতদের আসানসোল আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জামিন নাকচ করে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশের অনুমান, এই ঘটনার পেছনে আন্তঃরাজ্য চক্র রয়েছে। আর তার মাথায় রয়েছে আরো দুজন। যারা ” কিংপিন “।

রড বোঝাই ট্রেলার হাইজ্যাক


আরো জানা গেছে, ধৃতদের জেরা করে পুলিশ শুক্রবার সকালে রানিগঞ্জ ও অন্ডালের পাশে একটি জঙ্গল থেকে ট্রেলারটিকে পেয়েছে।
শুক্রবার সকালে এই ঘটনার বিস্তারিত জানাতে আসানসোল উত্তর থানায় একটি সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়। সেখানে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (সেন্ট্রাল) ডঃ কুলদীপ এসএস বলেন, গত ২০ মে রাতে বাঁকুড়ার মেজিয়া একটি কারখানা থেকে একটি ট্রেলারে প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকার ৪১ টন লোহার রড নিয়ে ঝাড়খণ্ডের গয়ায় যাচ্ছিল। আসানসোল উত্তর থানায় জুবিলি মোড়ের কাছে ট্রেলারের চালক খাবার খাওয়ার জন্য ২ নং জাতীয় সড়কের পাশে একটি ধাবায় গাড়ি থামায়। তারপরে সেখানে একটি স্করপিও গাড়িতে পাঁচজন আসে। তারা ট্রেলারের চালককে বলে, আমরা জিএসটি অফিসার। ট্রেলারটিকে পরীক্ষা করা হবে। এরপর ট্রেলারের খালাসিকে ডাকা হয়। এরপর ট্রেলারের চালক ও খালাসিকে অপহরণ করে স্করপিওতে তোলা হয়।


তিনি আরো বলেন, স্করপিও গাড়িটি সামনে রেখে ট্রেলারটিকে জুবিলি মোড় থেকে রানিগঞ্জের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। কিন্তু আসানসোলের কালিপাহাড়ির কাছে ট্রেলারটি খারাপ হয়ে যায়। নিরুপায় হাইজ্যাকাররা ট্রেলারের চালক ও খালাসিকে নামিয়ে তা ঠিক করে। এরপর অন্ডালের দিকে সেটিকে নিয়ে চলে যাওয়া হয়। সারারাত বিভিন্ন এলাকায় ঘোরানোর পরো ২১ মে সকালে ট্রেলারের চালক ও খালাসিকে কালিপাহাড়ীর কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর তারা গোটা ঘটনার মালিককে জানান। ঘটনার খবর দেওয়া হয় আসানসোল উত্তর থানায়। ২৩ মে গয়া থেকে মালিক এসে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।


এরপর আসানসোল উত্তর থানার ওসি তন্ময় রায়ের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়। সেই টিম তদন্ত করতে নেমে বাঁকুড়ার মেজিয়া থেকে আসানসোল, রানিগঞ্জ ও অন্ডাল থানা এলাকার ২ নং জাতীয় সড়কে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সহ বিভিন্ন সোর্স ব্যবহার করে। তাতেই জানা যায়, অন্ডালের কোথাও ঐ ট্রেলারটি রয়েছে। এরপর বিভিন্ন ভাবে খোঁজ করে পুলিশ ২৪ মে গ্রেফতার করে তাপস মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে। তার বাড়িতে থাকা একটি গুদামে অভিযান চালিয়ে পুলিশ চুরি হওয়া ৪১ টন লোহার রডের মধ্যে ৩৭ টন লোহার রড উদ্ধার করে। ধৃত তাপস মন্ডল লোহার রডের ব্যবসায়ী। এরপর তাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রশান্ত দাস, হায়দার আলী, নীরজ খান, শাহনাজ হোসেনকেও গ্রেফতার করা হয়। ডিসিপ (সেন্ট্রাল) এদিন আরো বলেন, গ্রেফতার হওয়া পাঁচজনকেই ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এখন পর্যন্ত ধৃতদের বিরুদ্ধে এর আগের কোন অপরাধ করেছে, এমন রেকর্ড সামনে আসেনি। এই ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply