আসানসোলে তিনজনের মৃত্যু, নদীতে ভেসে যাওয়া গাড়ির খোঁজ মিলল
বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, রাজা বন্দোপাধ্যায় ও সৌরদীপ্ত সেনগুপ্তঃ গাড়ুই নদীতে ভেসে যাওয়া চারচাকা গাড়ির খোঁজ মিললো। সেই গাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার হলো চালকের দেহ। শনিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে ( কল্যানপুর হাউজিং) কিছুটা দূরে আসানসোলের গাড়ুই নদী থেকে গাড়িটি উদ্ধার করে এনডিআরএফের দল। মৃত চালকের নাম চঞ্চল বিশ্বাস ( ৫৯)। প্রাক্তন সেনা কর্মী চঞ্চল বিশ্বাস আসানসোলে একটি সরকারি কোম্পানির কর্মচারী ছিলেন। চলতি বছরেই তার চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার কথা ছিলো। তিনি সুগম পার্কের বাসিন্দা ছিলেন। তার স্ত্রী একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে।
শুক্রবার আসানসোলে বৃষ্টির মধ্যে আরো দুটি জলে ভেসে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেই দুটি ঘটনায় এক খনি কর্মী সহ দুজনের মৃত্যু হয়। শনিবার সকালে সেই দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতরা হলো আসানসোল উত্তর থানার রেলপারের ডিপোপাড়ার কেএস রোডের রোহিত রায় (২৯) ও আসানসোল দক্ষিণ থানার রাহালেনের গৌরাঙ্গ রায় ( ৩৯)।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আসানসোলের রাহালেনের গৌরাঙ্গ রায় ইসিএলের কালিপাহাড়ি কোলিয়ারিতে চাকরি করতেন। শুক্রবার বৃষ্টি মধ্যে তিনি মোটরবাইকে আসানসোলের বাড়ি থেকে কোলিয়ারিতে যাচ্ছিলেন। কালিপাহাড়ি কোলিয়ারির কাছে কালিপাহাড়ি রেল ব্রিজ দিয়ে জল যাচ্ছিলো। তার মধ্যে দিয়ে গৌরাঙ্গবাবু মোটরবাইক নিয়ে পার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু জলের তোড় সেখানে এতোটাই বেশি ছিলো যে তিনি মোটরবাইক সহ ভেসে যান। তারপর থেকে তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত শনিবার সকালে কালিপাহাড়ি রেল ব্রিজ থেকে বেশকিছুটা দূরে ভেসে যাওয়া খনি কর্মী দেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর দেহটি আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
অন্যদিকে, আসানসোলের রেলপারের ডিপোপাড়ার কেএস রোডের রোহিত রায় শুক্রবার বাড়ির অদূরে সুকান্ত পল্লীতে গাড়ুই নদীর উপরে একটি অস্থায়ী সেতু পার করে আসছিলো। কিন্তু বেসামাল হয়ে রোহিত পা পিছলে নদীতে পড়ে তলিয়ে যায়।
তারপর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। শেষ পর্যন্ত শনিবার ভোর চারটে নাগাদ ১৯ নং জাতীয় সড়কে কাল্লা মোড়ে গাড়ুই নদী থেকে রোহিতের দেহ উদ্ধার হয়। এই প্রসঙ্গে আসানসোল পুরনিগমের চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় এদিন বলেন, খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। পাইপ নিয়ে যাওয়ার জন্য ঐ অস্থায়ী সেতু তৈরি করা হয়েছিলো। শহরে আরো দুটি ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের তরফে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আসানসোলের কল্যাণপুর হাউজিং এলাকায় গাড়ুই নদীর উপরে ব্রিজ দিয়ে জল বইছিলো। এলাকার বাসিন্দারা শুক্রবার সকালের পর থেকে ঐ সেতু পারাপার করছিলেন না। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যায় সুগম পার্কের বাসিন্দা চঞ্চল বিশ্বাস গাড়ি সহ ব্রিজ পার হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেতুর ওপর দিয়ে উপচে পড়া নদীর জলের তোড়ে গাড়ি সহ তিনি গাড়ুই নদীর জলে ভেসে যান।
সেই সময় প্রত্যক্ষদর্শী এবং আশেপাশের মানুষ বারণ করলেও তিনি তা না শুনে নদী পার হওয়ার চেষ্টা করেন। জলের প্রবল স্রোতে তিনি গাড়ি সমেত ভেসে যান রেলপারের দিকে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তারপর পুলিশ গাড়ির খোঁজ করছিল। গভীর রাত পর্যন্ত উদ্ধারকারী দল ও পুলিশ তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু পাওয়া যায় নি। শনিবার সকাল থেকে আবার তল্লাশি শুরু হয়। শুক্রবার সন্ধ্যার পরে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় গাড়ুই নদীর জলস্তর কমে। শেষ পর্যন্ত শনিবার সকালে কল্যানপুর হাউজিং ও রেলপারের মধ্যবর্তী এলাকায় গাড়িটি উদ্ধার করা হয়। এনডিআরএফের উদ্ধারকারী দল স্পিড বোট নিয়ে গিয়ে গাড়ি থেকে চালকের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, এদিন আসানসোল জেলা হাসপাতালে তিনজনের মৃতদেহর ময়নাতদন্ত হবে।