সোনার আংটির সূত্র ধরে চুরির কিনারা
বেঙ্গল মিরর, চরণ মুখার্জী, রানীগঞ্জ :: চুরি যাওয়া সোনার আংটির সূত্র ধরে উদ্ধার হল এক গৃহস্থের পরিবারের চুরি যাওয়া সকল সামগ্রীর সাথেই নগদ অর্থ ও সোনা রুপোর বিশাল পরিমাণ গহনা। শুক্রবার এমনই বিষয় লক্ষ্য করা গেল আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের রানীগঞ্জ থানা এলাকায়। এই ঘটনায় চুরির ঘটনা সংঘটিত করার অপরাধে পুলিশ তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যায় গত 14 ই নভেম্বর দুপুরে রাণীগঞ্জ থানার গির্জা পাড়া হলুদ ফ্যাক্টরি এলাকায় দীপক সিং নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে বাড়ির সদস্যদের অনুপস্থিতির সুযোগে তিন দুষ্কৃতকারী বাড়ির পেছন দরজা ভেজানো অবস্থায় থাকার সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে সেই দরজা দিয়ে ঢুকেই বাড়ির আলমারির মধ্যে থাকা মূল্যবান সোনার রুপোর গহনা ও নগদ কিছু টাকা নিয়ে চম্পট দেয়।
১৪ তারিখ রাত্রেই এই বিষয়টি বাড়ির সদস্যরা লক্ষ্য করে পাড়া প্রতিবেশীদের সাথেই পুলিশ প্রশাসনকে চুরির ঘটনা সম্পর্কে খবর দিলে পুলিশ দ্রুত এই ঘটনার তদন্ত শুরু করে দেয় দিকে দিকে নজরদারি চালানোর সাথেই এলাকার বিভিন্ন সোনার উপর গহনায় গহনা বিক্রি করতে এলে খবর দেওয়ার জন্য জানিয়ে দেওয়া হয়। আর এখানেই মেলে সফলতা কত ১৬ ই নভেম্বর এক সোনার গহনার দোকানে ওই দুষ্কৃতীদলেরই একজন গির্জা পাড়ারই বাসিন্দা বাদশা খান একজন মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে আংটির দোকানে আংটির উপর খোদাই করা দীপক নামকে পরিবর্তন করে আব্বাস বলে এক নাম লিখতে বললেই অলংকার দোকানের কারিগরের মনে সন্দেহ হয় আর তারপরেই পুলিশ প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে খবর গেলে পুলিশ দ্রুত সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই ঘটনায় অভিযোগ দায়েরের পরই রানীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর বিকাশ দত্তর নেতৃত্বে পিসি পার্টির বিশেষ দল সাব-ইন্সপেক্টর প্রীতম পাল, পিএসআই এমডি পারভেজ ও এস আই শ্রীকান্ত পাঞ্জা কে সঙ্গে নিয়ে, দিকে দিকে খোঁজ-তল্লাশির পর, অবশেষে এলাকার চারিপাশে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার সূত্র ধরে, বাদশা খান কে চিনতে পারে।
পুলিশের কাছে এই বাদশা খান আগে থেকেই পরিচিত, নেশা গ্রস্ত এ বাদশা খান এর আগে প্রায় ১৪ টির মত মোটরবাইক চুরির ঘটনায় যুক্ত ছিল, তার সাথে বেশ কয়েক দফায় চুরির ঘটনাও সংঘটিত করেছে সে। আর এই ঘটনার সামনে আসার পরই, পুলিশ চারিদিকে তৎপর হয়ে খোঁজ তল্লাশির পর ১৯শে নভেম্বর রাত্রে এই বাদশা খানকে ও তার দুই সহযোগী হিসেবে থাকা অভিজিৎ গোন্ড ও অর্জুন পাশোয়ান কে অতর্কিতে অভিযান চালিয়ে রেল গ্রাউন্ড এলাকায় নেশা করার সময়ে পাকড়াও করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার পুলিশ ধৃতদের আসানসোল জেলা আদালতে হাজির করে, বিচারকের কাছে, তাদের আগামীতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানালে, বিচারক ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরই পুলিশ ধৃত ওই তিন দুষ্কৃতকারী কে সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত্রেই বিভিন্ন অংশে তল্লাশি চালিয়ে চুরি যাওয়া সোনা, রুপোর গহনা ও নগদ প্রায় ৩৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে। পুলিশের এই বিশেষ তৎপরতায় চুরি যাওয়া সকল সামগ্রী আবার ফিরে পেয়ে স্বভাবতই খুশি, দীপক সিং ও তার পরিবার পুলিশের এই বিশেষ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা।
তাদের দাবি পুলিশে অভিযোগ করার পর থেকেই পুলিশ সক্রিয়ভাবে তদন্ত করে, এই ঘটনার উপর নজর রেখে তাদের তাদের যে রূপভাবে চুরি যাওয়া সামগ্রী উদ্ধার করতে তৎপর হলো তা সত্যিই প্রশংসনীয়, তাই পুলিশকে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শুক্রবার এই চুরির সামগ্রী উদ্ধার সহ ধৃত তিন দুষ্কৃতীকে এক সাংবাদিক বৈঠক করে সমস্ত বিষয় সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন রানীগঞ্জ থানার ইন্সপেক্টর বিকাশ দত্ত, সঙ্গে উপস্থিত থাকতে দেখা যায় ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থেকে সমগ্র উদ্ধার কাজ চালানোর কাজে নিযুক্ত থাকা পুলিশ আধিকারিক সাব-ইন্সপেক্টর প্রীতম পাল, এ এস আই শ্রীকান্ত পাঞ্জা, ও পি এস আই এম ডি পারভেজকে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে আগামীতে এই দুষ্কৃতকারীরা আরো কোনো ঘটনা সংঘটিত করেছিল কিনা তা নিয়েও চলবে জিজ্ঞাসাবাদ।