ASANSOL

রাজনীতি এখন আয়ের উৎস, কয়লা ও বালি পাচার নিয়ে আক্রমণ বিমান বসুর

আসানসোলে দুই সিপিএম নেতার স্মরণ সভায় বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান

বেঙ্গল মিরর, আসানসোল, দেব ভট্টাচার্য, সৌরদীপ্ত সেনগুপ্ত ও রাজা বন্দোপাধ্যায়ঃ ( Asansol News In Bengali ) রাজনীতি এখন একটা আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতি এখন কেউ সমাজের শোষিত ও বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য করেননা। সবাই ভাবছেন, রাজনীতিটা করি, তাতে কিছুটা আয় হবে। বুধবার বিকেলে আসানসোলের রবীন্দ্র ভবনে সিপিএমের দুই নেতা প্রয়াত বামাপদ মুখোপাধ্যায় ও গৌতম রায়চৌধুরীর স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু ( Biman Bose ) । রাজ্য সিপিএমের প্রাক্তন সম্পাদকের এই কথার মধ্যে বেশ কিছুটা হলেও সমালোচনা ও আত্মসমালোচনার সুরও ছিলো।

Biman Bose


এদিনের সভায় কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দল বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে সব রাজনৈতিক দলকে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো। সেই আমন্ত্রনে সারা দিয়ে বলতে গেলে সবাই এসেছিলেন। এই ডাকার পেছনে একটা রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাদের বক্তব্য, সামনেই ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে রাজ্য নেতৃত্বর তরফে দলের নিচু তলার নেতা ও কর্মীদের কাছে একটা বার্তা দেওয়া হলো। যাতে তারা এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি ও তৃণমূলকে আটকাতে বা হারাতে নিজেদের মতো করে অন্য দলের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারেন।


বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে আরো বলেন, আমরা আগে জানতাম এখানকার মাটির নিচে কালো হিরে বা কয়লা আছে। যা দেশের সম্পদ। কিন্তু ২০১১ সালের পরে কি দেখলাম এই কয়লা, বালি পাথর, গরু সবই পাচার করা হচ্ছে। আর তার পেছনে রাজ্যের শাসক দলের নেতারা কোন না কোন ভাবে জড়িয়ে রয়েছেন। এটা ভাবা যায়? বর্তমানে এমন একটা রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরী হয়েছে, তার পরিবর্তন অবশ্যই দরকার বলে সিপিএমের এই প্রবীন নেতা মনে করেন। তার জন্য ইস্কো বাঁচাওয়ের মতো সবাইকে একজোট হয়ে লড়াই করতে হবে। তিনি বলেন, আজ যে দুই নেতা বামাপদ মুখোপাধ্যায় ও গৌতম রায়চৌধুরীর স্মরণ সভা হচ্ছে, তারা মানুষের জন্য ভাবতেন ও কাজ করতেন।বার্ণপুরের ইস্কো কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনে চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায়ের পাশাপাশি বামাপদ মুখোপাধ্যায়ের বড় একটা অবদান ছিলো।


এই সভার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বিমান বসু ভাঙ্গড়ের আইএসএফ বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকর গ্রেফতার থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগের দূর্নীতিতে রাজ্য সরকার ও রাজ্যের শাসক দলকে আক্রমন করেন। তিনি বলেন পরিকল্পনা করে নৌশাদ সিদ্দিককে গ্রেফতার করে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে রাখা হয়েছে। একজন বিধায়ক চলতি বিধান সভা অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারলেন না। এটা গনতন্ত্রের পক্ষে খারাপ ও বিপজ্জনক। স্পিকার বিমান বন্দোপাধ্যায় যে কথা বলেছেন তা একবারে ঠিক। শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগের দূর্নীতি নিয়ে বাম চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীন ভারতের কোন রাজ্যে এতো বড় দূর্নীতি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। বাংলায় তো হয়নি। একটা দূর্নীতি হলো, যা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়। তা না হলে, রাজ্য সরকারের একজন মন্ত্রী ও অফিসাররা জড়িত থাকেন? শেষ পর্যন্ত এর কোন নিষ্পত্তি হবে কিনা জানিনা। তবে এর ব্যাপকতা বিশাল। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিদের সুরে বিমান বসু সিবিআইয়ের তদন্তে দেরী নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।


তৃনমুল কংগ্রেসের জামানায় আসানসোলে বামাপদ মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অর্পণ মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপ সরকার, কর্মী নির্গুন দুবেকে গুলি করে খুনের ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, এইসবের পেছনে একটা রাজনৈতিক অভিসন্ধি অবশ্যই ছিলো। এখন বাংলায় তৃনমুল কংগ্রেস তৃনমুল কংগ্রেসকে মারছে। এগুলো দলীয় কোন্দল। কিন্তু ঐসব ঘটনা তো দলীয় কোন্দল নয়।
এদিনের সভায় জনৈক প্রদীপ ঘোষ গণশক্তির তহবিলে ৫ হাজার ও নিউ টাউন রাজারহাটে জ্যোতি বসু রিসার্চ সেন্টারের তহবিলে পারিজাত বোস ১০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন বিমান বসুর হাতে। সভায় অন্যদের মধ্যে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়, মহিলা সংগঠনের রাজ্য নেত্রী জাহানারা খান, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ও পার্থ মুখোপাধ্যায়।

Leave a Reply