ASANSOLBengali News

ভারতীয় রেলে নতুন ভাবনা, পথ দেখালো আসানসোল ডিভিশন, ৩৫ বছর কাজ করে অবসর নেওয়া বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনকে দেওয়া হলো নতুন রুপ

” সান্টিংয়ে ” মডেল হিসেবে চলবে শিয়ালদহে

বেঙ্গল মিরর , দেব ভট্টাচার্য ও রাজা বন্দোপাধ্যায়, আসানসোল, ১৬ জুলাইঃ বলা যেতে পারে, ভারতীয় রেলকে আবার পথ দেখালো পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশন। এতদিন ভারতীয় রেলের যে কোনো রেল স্টেশনে সান্টিং করা বা কোনও খালি যাত্রী ট্রেন ইয়ার্ড থেকে প্লাটফর্মে নিয়ে আসার জন্য ডিজেল সান্টার বা ডিজেল লোকোমোটিভ ব্যবহার করা হতো। এই প্রথম পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনে ৩৫ বছর পার হয়ে অবসরে থাকা ডব্লুডিএস সিক্স মডেলের একটি বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনকে নানা ভাবে আধুনিক করে সানটিংয়ের কাজে ব্যবহার যোগ্য করে তোলা হলো।

আসানসোল ডিভিশন থেকে সেটিকে শিয়ালদহ ডিভিশনে পাইলট প্রকল্প সানটিং ইঞ্জিন হিসেবে পাঠানো হলো। ভারতীয় রেলে এমন ইঞ্জিন প্রথম তৈরি হল যা সান্টিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হবে। এটি সার্থক হলে ভারতীয় রেলের ডিজেল সান্টার ইঞ্জিনের পরিবর্তে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার সাশ্রয় হবে। সেইসঙ্গে কমবে দূষণও ।


এই বিষয়ে আসানসোলের ডিআরএম সুমিত সরকার বলেন, সাধারণত একটি বৈদ্যুতিক রেল ইঞ্জিনের আয়ু ৩৫ বছর। ৩৫ বছর কাজ করার পরে এমন একটি রেল ইঞ্জিন আসানসোলের রেল ইয়ার্ডের টিআরএস শেডে পড়েছিল। রেলের বিদ্যুৎ দপ্তরের রেলের ইঞ্জিনিয়াররা কর্মীদের একটি টিমের সহযোগিতায় মাসখানেকের চেষ্টায় ডিভিশনের জিনিস ব্যবহার করে নতুন করে এই ইঞ্জিন তৈরি করা হয়েছে।

এই নতুন ইঞ্জিনের বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমতঃ সানটিং কাজের জন্য ইঞ্জিন চালু করতে অনেকগুলো চাবি ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে একটি মাত্র সুইচ বা চাবির মাধ্যমে এটি চালু করা হবে। আগে সামনের থেকে পেছন ক্যাবে গিয়ে চালু করতে সময় লাগত ৫ মিনিট। এখন তা কমে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ সেকেন্ডে দাঁড়াবে। পাশাপাশি একজনই এটা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। ঘন্টায় ১৫ কিলোমিটার গতিতে চলবে এই ইঞ্জিনে। সবচেয়ে বড় কথা এতে সময় যেমন বাঁচবে তেমনি যাত্রী ট্রেনের ক্ষেত্রে বগি লাগতেও সময় বাঁচবে। যাত্রীরা এই সুবিধা পাবেন। সর্বোপরি এতদিন যে ডিজেল ইঞ্জিনে সানটিং হয় সেখানে ঘন্টায় ১২ থেকে ১৫ লিটার ডিজেল খরচ হতো। তার সঙ্গে কার্বনের মত দূষণ তৈরি হতো।

এই বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনে একদিকে যেমন প্রচুর ডিজেলের খরচ কমবে অন্যদিকে দূষণও বন্ধ হবে। এই ইঞ্জিনের দুপাশে চার চাকার গাড়ির মতো আলাদা করে বিশেষ আয়না লাগানো আছে। যা পিছন থেকে বা পাশ থেকে সবটাই দেখা যাবে । তিনি আরো বলেন, ভারতীয় রেল ক্রমশ যে গ্রীন এনার্জি কথা বারবার বলছে ও দূষণমুক্ত রেলের দিকে রেল পরিষেবার কথা বলছে সে দিক থেকে এই ইঞ্জিনটি অবশ্যই বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে । ইঞ্জিনটি সম্পূর্ণ নতুন করে আকর্ষণীয় রংও করা হয়েছে ।


পূর্ব রেল সূত্রে জানা গেছে, আসানসোলের এই ইঞ্জিনটি শিয়ালদহ ডিভিশনে সানটিং লোকো হিসাবে ব্যবহার করা হবে। এর সাফল্য মিললে সারা দেশেই ভারতীয় রেল ধীরে ধীরে ডিজেল ইঞ্জিন সানটিংয়ের জন্য তুলে দিয়ে এমন অবসর নেওয়া বৈদ্যুতিক রেল ইঞ্জিন নতুন মডেল হিসাবে ব্যবহার করবে, বলে রেলের আধিকারিকরা মনে করেন।

Leave a Reply